বুধবার, ৩১ মে ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বন্যায় ৩ জনের মৃত্যু




এবারের বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট ও কুড়িগ্রামে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীও রয়েছে বলে জানা গেছে।

সুনামগঞ্জ, সিলেটে বন্যায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। অপরদিকে কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান- বন্যায় উলিপুরের দুর্গাপুরে মাকসুদা জান্নাত (১১) নামে একটি মেয়ে পানিতে পড়ে মারা গেছে।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সুনামগঞ্জের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। দেশে প্লাবিত ১২ জেলার মধ্যে ৭০টি উপজেলার ৪০ লাখ পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উদ্ধার তৎপরতা চলছে বলেও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে বন্যায় যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে- তাদের একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী, সে পানির টানে ভেসে গেছে। আরেকজন বয়স্ক ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় বিস্তারিত জানাননি প্রতিমন্ত্রী।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। চলমান বন্যায় উলিপুরের দুর্গাপুরে মাকসুদা জান্নাত (১১) নামে একটি মেয়ে পানিতে পড়ে মারা গেছে।

রোববার বিকাল ৩টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৩৮ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে এখনো ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে।

এ পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম, ৯ উপজেলায় একটি করে মনিটরিং টিম এবং সিভিল সার্জন অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ১৮টি ভেটেনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

তবে রোববার থেকে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস উপজেলাগুলো থেকে ক্ষয়ক্ষতির আপডেট নেওয়া শুরু করেছে। এই বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, আজকের সকালের তথ্য অনুযায়ী ৪৯টি ইউনিয়নে ৮৭ হাজার ২৩২জন মানুষ পানিবন্দি হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সবগুলো উপজেলা ও ইউনিয়নগুলো থেকে তথ্য উঠে না আসায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক ছড়িয়ে যাবে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইউপি সদস্য, সংবাদকর্মী ও বিভিন্ন সোর্সে সংবাদ পাওয়া গেছে।

এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত ৫৩ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ৭৪২টি পুকুরের ৭০৫ জন মৎস্য চাষির ১১৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, বন্যায় প্রায় অর্ধশতাধিক মুরগি মারা গেছে। এছাড়াও গো-চারণভূমি, খড় ও দানাদার শস্য তলিয়ে যাওয়ায় ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ১৮টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

খামার বাড়ির উপপরিচালক মো. আব্দুর রশীদ জানান, এখন পর্যন্ত বন্যায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কর্মকর্তারা পরামর্শ দেওয়াসহ তথ্য সংগ্রহ করছেন।

সিভিল সার্জন ডা.মঞ্জুর-এ-মোর্শেদ জানান, বন্যার্তদের সহযোগিতায় জেলায় মেডিকেল অফিসারের নেতৃত্বে ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ৯ উপজেলায় ৯টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মেডিকেল টিমের সদস্যরা বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, কলেরা স্যলাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে সহযোগিতা করছে।

তিনি জানান, উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের যমুনা সরকারপাড়া গ্রামের মাঈদুল ইসলামের কন্যা মাকসুদা জান্নাত (১১) শনিবার দুপুর সাড়ে ১১টায় বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে পরে মারা গেছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নাগেশ্বরীতে বেড়িবাঁধের ৫০ মিটার ওয়াস আউট হয়ে গেছে। এছাড়া দুধকুমর নদীর কালিগঞ্জ, বামনডাঙ্গা ও ধাউরারকুটি এলাকায় বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই এলাকায় ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করা হবে। বন্যার পানি আরও তিন দিন বাড়তে থাকবে। এরপর কমে নিম্নগামী হবে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রুহুল আমিন জানান, বন্যায় দুর্গম চরাঞ্চলে যাতে চুরি ও নৌ-ডাকাতি না যায় এজন্য বিচ্ছিন্ন এলাকায় পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোথাও ত্রাণ দিলে পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। এছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকায় প্রচার-প্রচারণা ও উঠান বৈঠক করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সব দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতিদিনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা এবং ৪০৭ মেট্রিকটন চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়াও আরও ৫০০ মেট্রিকটন চাল ও ২০ লাখ টাকার চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: