শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

বাংলাদেশি পুরুষদের ভিসা প্রাপ্তিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্রিটিশ মেয়েরা




বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বহু মেয়েকে জোর করে বাংলাদেশি পুরুষদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে ওই পুরুষরা বিয়ের সূত্রে ব্রিটিশ ভিসা পেতে পারে। ওয়েলসে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা রুবি মেরি এমন একজন যিনি বহু বছর আগে একই রকম ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন তার সেই অভিজ্ঞতার কথা। তার ভাষায়, বিয়ের সময় ‘পুতুলের মতো সাজানো হয়েছিল।’ ১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যে স্কুল ছাত্রী থাকা অবস্থায় ১৫ বছর বয়সে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয় বিয়ে দেওয়ার জন্য। সেখানে তার চাচা তার জন্য পাত্র ঠিক করে রেখেছিলেন। ওই ব্যক্তি ব্রিটিশ ভিসার জন্য তাকে বিয়ে করতে আগ্রহী হয়েছিল।

বলপূর্বক দেওয়া বিয়েতে থেকে পালিয়ে যেতে পারা মেরি বলেছেন, ‘দেশে ফেরত গিয়ে আমি দেখলাম, এখনও এমন প্রথা চালু রয়েছে। অল্প বয়সী মেয়েরা বিয়ের ফাঁদে পড়ে এবং সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারে না।’ তার এই বক্তব্য এমন এক সময় এলো যখন এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সরকার প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকার এমন বহু পুরুষকে বিয়ের সূত্রে ভিসা দিয়েছে যারা সংশ্লিষ্ট নারীদের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করেছে। দ্য টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মতো দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে বিয়ের জন্য যেতে বাধ্য হয়েছিল এমন মেয়েদের বড় একটি অংশ পরবর্তীতে তাদের ‘স্বামীদের’ ভিসা প্রক্রিয়া আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যে ৮৮টি ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর মধ্যে ৪২টিতেই সংশ্লিষ্ট স্বামীরা ভিসা পেয়েছে।

সামাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ‘না দেখার ভান’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকার যেন ইচ্ছে করেই ব্রিটিশ মেয়েদের এমনভাবে ব্যবহৃত হতে দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বলপূর্বক দেওয়া বিয়ের একজন ভুক্তভোগী জাসভিন্দার সাঙ্ঘেরা। কার্মা নির্ভানা নামের সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের এই প্রতিষ্ঠাতা মন্তব্য করেছেন, ‘এমন কি কর্মকর্তারাও যখন বুঝতে পারেন বলপূর্বক বিয়ের ঘটনা ঘটেছে, তখনও তারা সেখানে প্রথা, ধর্ম, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য দেখেন এবং নির্বিকার চিত্তে কাজ করে যান।’

২০১৪ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বলপূর্বক বিয়ের বিরুদ্ধে আইন পাস হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী বলপূর্বক বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইনে এখন পর্যন্ত দুই পক্ষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। একটি ঘটনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক বাবা-মাকে মোট আট বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। লিডসে বসবাসরত ওই বাবা-মা তাদের মেয়েকে জোর করে একজন নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আরেকটি ঘটনায় পাকিস্তানি এক নারীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ওই নারী তার মেয়েকে দ্বিগুণ বয়সী পুরুষের সঙ্গে বলপূর্বক বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

যুক্তরাজ্য সরকারের বলপূর্বক বিয়ে বিরোধী সংস্থা ‘ফোর্সড ম্যারেজ ইউনিট’ (এফএমইউ) জানিয়েছে, ব্রিটিশ নাগরিকদের বলপূর্বক দেওয়া বিয়ের ঘটনায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চারটি দেশ। এগুলো হলো পাকিস্তান (৪৩৯), বাংলাদেশ (১২৯) সোমালিয়া (৯১) এবং ভারত (৮২)। সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, এসব মেয়েদের অনেককে বিয়ে দেওয়ার পর গর্ভবতী না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে থাকতে বাধ্য করা হয়। গর্ভবতী হলে তাকে যুক্তরাজ্যে যেতে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বাচ্চা সঙ্গে থাকলে বিয়ের সূত্রে স্বামীর পক্ষে ভিসা পাওয়া সুবিধা হবে। যুক্তরাজ্যে স্ত্রী সন্তান জন্মদান করলে স্বামী ভিসার জন্য আবেদন করেন এবং স্বামী শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে যেতে সমর্থ হন। স্ত্রী তার স্বামীর ওই ভিসা আবেদন বাতিলের আবেদন করতে পারেন। কিন্তু এ জন্য তাদেরকে প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে হয়। সংস্থাগুলো মনে করে, ওই প্রক্রিয়ার জন্যই বলপূর্বক বিয়ের ভুক্তভোগী ব্রিটিশ মেয়েরা ভিসা আবেদন বাতিলের আবেদন করা থেকে পিছিয়ে যায়।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ‘বলপূর্বক বিয়ে ঠেকানোর বিষয়ে যুক্তরাজ্য সেরা। এর বিরুদ্ধে লড়াই করাটা ২০১৬ সালে প্রকাশিত নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আন্তঃ সরকার সমঝোতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিরাপত্তা নিশ্চিতের পদক্ষেপের বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যদি স্পন্সর নিজেই ভিসা আবেদনের বিরোধিতা করেন তাহলে ওই ভিসা দেওয়া হবে না, সোজা কথা। ফোর্সড ম্যারেজ ইউনিটে যেসব কেস পাঠানো হয় তার সবগুলোতেই যে স্পন্সরের সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয় জড়িত তা নয়। যেসব মামলায় তদন্ত করে দেখা যাবে যে কোনও বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার নেই, সেসব ক্ষেত্রে আইনানুগ প্রক্রিয়ার ভিসা ইস্যু করে দেওয়া হবে।’

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: