এমদাদ চৌধুরী দীপুঃ
আগামী ১৭ মার্চ বাংলাদেশে আসছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্বের সংগঠক, অবিসংবাদিত নেতা,বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন উপলক্ষে আয়োজিত বছরব্যাপী অনুষ্টানের উদ্বোধনী অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে মোদী আসার কথা থাকলেও বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আনা হয়েছে কর্মসূচীতে। মোদীসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাস্ট্রপ্রধান,সরকার প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিদের সফর স্থগিত করা হয়েছে। প্যারেড গ্রাউন্ডে দুইলাখ মানুষের সমাবেশ না করে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বছরব্যাপী আয়োজনের সূচনা অনুষ্টানকে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। তবে মুজিববর্ষের নামে মোদী বন্দনা থেকে পিছু হটেনি আওয়ামীলীগ। এবার মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ভারত থেকে মোদীকে যুক্ত করার কথা জানানো হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ, রাস্ট্র এবং সরকারকে ব্যবহার করে বছর জুড়ে যে আয়োজন সাজিয়েছে মুজিব শতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে তার মূল ইভেন্ট হচ্ছে উদ্বোধনী অনুষ্টান। এই মহা আয়োজনের মধ্যমণি মোদীকে নিয়ে এখন মহাবিপদে আওয়ামীলীগ। শুরু থেকেই মুজিব জন্মশত বার্ষিকীর আয়োজন প্রশ্নবিদ্ব।এই আয়োজনে কুখ্যাত খুনী মোদীকে অতিথি করার প্রতিবাদে বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া,আর পঞ্চগড় থেকে সুন্দরবন সবখানে তৌহিদী জনতা প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। উত্তাল ছিল ঢাকার রাজপথ। মোদী বিরোধী এই যুদ্ব পরিনত হোক ভারত খেদাও আন্দোলনের অংশ। এমন মত ভারতবিরোধী বুদ্বিজীবীসহ দেশপ্রেমিক নাগরিকদের।
মুজিব জন্ম শতবার্ষিকী পালনের নামে কী হচ্ছে এমন অনেক খবর আসছে গণমাধ্যমে। এ ছাড়া আজ্ঞাবহ একটি নির্বাচন কমিশন দিয়ে জনগনের ভোট ছাড়া আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে চীন-ভারতের সমর্থন নিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় আছে তাদের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দেশে- বিদেশে। সঙ্গত কারনে মুজিব বর্ষের নামে জনগনের ভোট ছাড়া ফ্যাসিবাদী একটি সরকার রাস্ট্রের টাকা খরছ করে এবং বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্টানের কাছ থেকে বড় অংকের চাদা আদায় করে বছরজুড়ে এই আয়োজন নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে জনমনে। এই আয়োজনের ফলে ইতিহাসের একজন মহানায়ককে অপমান করা হচ্ছে কী-না সেটাও ভাবনার বিষয়।
মুজিব বর্ষের আয়োজন নিয়ে নানা বিতর্ককে পিছনে ফেলে যে বিষয়টি নিয়ে দেশ গত সপ্তাহে দেশ উত্তাল হয়েছিল সেটি হচ্ছে মুজিব জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্টানে ভারতের প্রধান মন্ত্রী মোদীর স্ব শরীরে উপস্থিতি।
দিল্লীতে সাম্প্রতিক রাস্ট্রীয় মদদে হিন্দু জঙ্গী সংগঠন আর এস এস এবং পুলিশ কতৃক মুসলিম গণহত্যার জন্য মোদীকে দায়ী করে যে কোন মূল্যে বাংলাদেশে মোদিকে আসতে দেয়া হবেনা এমন ঘোষনা দিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল। এদিকে সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগ-র শীর্ষ নেতারা বলছেন মোদির আগমন ঠেকানো যাবেনা,মোদীকে বরন করতে প্রস্তুত মুজিব জন্ম শতবার্ষিকী পালনের জন্য আয়োজক আওয়ামীলীগ এবং বর্তমান সরকার। পররাস্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলছেন সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে মোদীকে বরণ করা হবে। মোদীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারনে একধরনের যুদ্ব অবস্থা সৃস্টি হয় বাংলাদেশে। এই যুদ্বের আপাত বিরতি হলেও এটি ভারত খেদাও আন্দোলন হিসেবে চালিয়ে যাওয়ার সূচনা মনে করতে চান ভারতীয় উপনিবেশ বিরোধী মহল। রাস্ট্রীয় শক্তির বিরোদ্বে যারা চ্যালেঞ্জ ছূড়ে মোদী আসলে একটি কিয়ামত হবে দেশে এমন সাহসী ঘোষনায় হতাশ তৌহিদী জনতা আবার নতুন করে আশায় বুক বেধেছিলেন যে এখনো বাংলাদেশের সব আলেম ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাননি।
মোদী বিরোধী লড়াইয়ে ঐতিহাসিক ভুমিকা ছিল ডাকসু ভিপি নুরের। ডাকসু ভিপি নুর যেভাবে ছাত্রদের অধিকারসহ দেশ এবং মানুষের জন্য নিবেদিত নেতা সে রকম ভুমিকায় অন্য রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন গুলো সক্রিয় থাকলে ভারতের বিরোদ্ব ব্যাপক আন্দোলন সুস্টি করা সম্ভব হবে। দেশের ছাত্রসমাজকে রাস্তায় নামানো এখন সময়ের দাবী কারন মোদী সফরকে কেন্দ্র কওে এই সরকারের ভারতের দাসত্বেও বিষয় পরিস্কার হয়ে গেছে।
দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মোদীর সফর,মুজিব বর্ষসহ ভারতের তাবেদারী নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন,এদিকে লেখক গবেষক গোলাম মাওলা রনি তার ইউটিউব বিশ্লেষনে নিয়মিত এবং ধারাবাহিক উপস্থাপনায় বিভিন্ন মত তুলে ধরছেন। সভা,সমাবেশ সেমিনার,গবেষনা রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে ভারতের নিল নকশা জনগনের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। ভারত শুধু আওয়ামীলীগ নয় অনেক ইসলামী সংগঠনকে সুবিধা দিয়ে তাদের জালে আটকে রেখেছে তাই কারা মোদী বিরোধী কিংবা ভারত বিরোধী ভুমিকায় সক্রিয় নয় তাদের তালিকা তৈরী করা প্রয়োজন।
চরমোনাইর পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলনকে এই সরকার ব্যবহার করছে এদও ব্যাপাওে সতর্ক থাকতে হবে। মোদী বিরোধী আন্দোলনে তাদেও ভ’মিকা লক্ষনীয় ছিল কিন্তু তারা কিভাবে নির্ভিঘেœ রাজনীতি করছে নির্বাচন করছে,সরকারের সহায়তা পাচ্ছে এই রহস্য খোজে বের করে তাদেও ভারত বিরোধী ভুমিকা স্পস্ট করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতেসহ ২০ দলের দিল্লীর শাসনের বিরোদ্বে স্পস্ট ঘোষনা আসেতে হবে।
বর্তমান সরকারের শরীক মরহুম মাওলানা আব্দুল লতিফ চৌধুরীর(ফুলতলী) আঞ্জুমানে আল ইসলাহ এবং তাদের ছাত্রসংগঠন তালামিয এ ইসলামসহ সরকারের সাথে যে সব ইসলামপন্থী সংগঠনের ভালো সম্পর্ক তারা কী শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে এই লড়াইয়ে?। কী ভুমিকা পালন করবে বিএনপি,ছাত্রদলসহ ডানপন্থী বড় সংগঠন এবং ২০ দলীয় জোট।এদিকে বাম সংগঠনগুলো এবং তাদের সমর্থিত ছাত্রসংগঠন গুলো কর্মসূচীর ধারাবাহিকতা রাখতে পারবে? লক্ষনীয় বিষয় দিল্লীতে মুসলিম গণহত্যার ঘটনায় রাজপথে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির। রাজপথে তাদের অবস্থান মোদীকে আটকানোর কর্মসূচীতে শরীক কীনা সে কৌতুহল আছে সংশ্লিস্ট মহলে।নানা প্রশ্ন-বিশ্লেষন এবং হিসেব নিকেশ মোদী বিরোধী কিংবা ভারত বিরোধী এই আন্দোলনকে নিয়ে।
বুয়েটের মেধাবী মুখ আবরার ফাহাদের মৃত রুহ থাকিয়ে আছে এই আন্দোলনের দিকে। ফেইসবুকে ভারতের সমালোচনা কিংবা ভারতকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সমীহ করার প্রতি ইঙ্গিতপূর্ন একটি পোস্ট আপলোড করার খুব ছোট্ট একটা অপরাধে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্রনামধারী ভারতের তাবেদাররা। বাংলাদেশের পিলখানা ট্রাজেডিতে শহীদ ৫৭ জন সেনা সদস্যের আতœা কস্ট পেতে পারে মোদী বন্দনার আয়োজনে। এদিকে দীর্ঘ ১১ বছর আওয়ামীলীগ দুঃশাসনে গুম হওয়া,নিখোজ হওয়া মানুষের পরিবারসহ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী,সালাহ উদ্দিনের পরিবারের হাহাকার বাড়াতে পারে মোদীর প্রতি সরকারের সীমাহীন আনুগত্যে।
বাংলাদেশে ভারত যেভাবে তাদের জাল বিস্তার করেছে সেই জাল থেকে বের হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে মোদিকে বাংলাদেশে অবাঞ্চিত করার মাধ্যমে। ভিডিও কনসফারেন্সে মোদী যুক্ত হলে জুতো প্রদর্শনের সে কর্মসূচী বহাল রাখা যেতে পারে। এটি অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সমন্বিতভাবে,সুকৌশলে,দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিয়ে ঈমানী চেতনা, দেশপ্রেম এর চেতনায় সাহস করে দাড়িয়ে গেলে এই জাল ছিড়ে ফেলা অসাধ্য কিছু নয়।
র্যাবের ডিজি বেনজির আহমদ ভারতের নির্লজ্ব দালালী করে বক্তব্য দিয়েছে। তার এই ভিডিও ক্লিপ সংরক্ষন করতে হবে। যারা মোদীকে বাংলাদেশে স্বাগত জানানোর ঘোষনা দিয়েছিল তাদেরকে ভারতীয় দালাল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে,ডাকসুতে ভারতের বিরোদ্বে কথা বলায় ভিপি নুরের উপর যারা চড়াও হয়েছিল তাদের চিহ্নিত করতে হবে,ভারতীয় দালাল প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। বাংলাদেশে যখন মোদীর বিরোদ্বে কোন হুজুর ওয়াজে কথা বলছেন তখন থানার ওসি ফোন করে গালি দিচ্ছে। পুলিশ বিভাগে শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ে ভারতের দালালদের তালিকা তৈরী করতে হবে।
বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক ভারতে ছাপানোর পিছনে কী মিশন সেটি খোজে বের করতে হবে।
তাই বলা যায় মোদী বিরোধী এই বিক্ষোভ শুধু ভারতে ৪২জন মুসলিম হত্যাই নয় এটি বাংলাধেশকে গ্রাস করার ভারতীয় নীল নকশার বিরোদ্বে একটি পুঞ্জিভ’ত ক্ষোভের প্রকাশ।