বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে করোনার চিকিৎসা ও বাস্তবতা




গোটা পৃথিবী আজ করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পর্যুদস্ত। আজ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষ covid-19 এ আক্রান্ত এবং ৮২ হাজার এর অধিক এই মহামারীতে মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলাদেশে এটা যথাক্রমে ২১৮ এবং ২০ জন।

৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সিলেটেও ৩/৪ দিন পূর্বে একজন রোগী সনাক্ত হয়েছেন। যিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে কর্মরত একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক। বিশ্ব epidemiology বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগের প্রায় ৪৫% সংক্রমণ হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে। এই সংক্রমণ বন্ধ করা বা কমানোর জন্য বাংলাদেশের চিকিৎসকরা যখন PPE’র জন্য দাবি জানালেন তখন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকরাসহ বিভিন্ন মিডিয়া হল খড়গহস্ত। এখন কিন্তু বাস্তবতা বোঝা যাচ্ছে। সিলেটের প্রথম রোগীই একজন চিকিৎসক।

আমাদের দেশে সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই আমরা শুনছি বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ থেকেও এই সংক্রমণ মোকাবেলায় ভালোভাবে প্রস্তুত। আমরা যারা মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী আমরা বলছি এই প্রস্তুতি অপ্রতুল। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনলেন না।

সিলেটে করোনা চিকিৎসার জন্য শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালকে ডেডিকেটেড করা হয়েছে। কিন্তু করোনা চিকিৎসার ন্যূনতম সুবিধা এই হাসপাতালে নেই। করোনা চিকিৎসার জন্য যেটা সবচেয়ে জরুরি তা হল ভেন্টিলেটর সমৃদ্ধ ICU, কিন্তু শামসুদ্দীন হাসপাতালে কোন আইসিইউ নেই। ওসমানী হাসপাতাল থেকে দুটা ভেন্টিলেটর আনা হয়েছে কিন্তু নেই কোন সেন্ট্রাল গ্যাস পাইপলাইন, নেই কোন আইসিইউ চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান বা আইসিইউ পারদর্শী স্বাস্থ্যকর্মী। অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে করোনা নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করা আর না করার মধ্যে কোন তফাৎ নেই।

এই হল আমাদের প্রিয় সিলেট বিভাগের করোনা চিকিৎসার বাস্তব অবস্থা। এই অবস্থায় সিলেটের করোনা আক্রান্ত চিকিৎসককে সিলেটে চিকিৎসা করা যখন অসম্ভব হল তখন তাকে ঢাকাতে স্থানান্তরের প্রয়োজন হল। সেখানেও ব্যর্থতা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকরা air ambulance এর ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হলেন। তাকে ঢাকা পাঠানো হল রোড ambulance এ।

আমরা যতই কাগুজে প্রস্তুতির কথা শুনলাম, সব প্রস্তুতি মাত্র একজন রোগী ক্ষেত্রেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল।

সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। এখন যদি এখানে প্রতিদিন করোনা পজিটিভ রোগী ভর্তি হওয়া শুরু হয়, তাহলে আমাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।

যেটা সত্য সেটা হল, আমাদের মত দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল। এরকম মহামারী সামাল দেবার মত সক্ষমতা আমাদের নেই। উন্নত বিশ্বই যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমরা ফাঁকা বুলি আওড়ানো মূর্খতারই নামান্তর।

কাজেই আসুন আমরা সবাই মহামারীর বিস্তার রোধে বিজ্ঞান মানি। ঘরে থাকি। মহামারীর বিস্তার রোধ করা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আমরা সেভাবে প্রস্তুত করতে পারি নাই, সিলেটের প্রথম রোগীতেই তা প্রমাণিত।

কাজেই চিকিৎসার অপেক্ষা না করে আমরা আসুন প্রতিরোধে মনোযোগী হই।

  • ডা. মো. তারেক আজাদ: অধ্যাপক, জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: