মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

ফ্রান্সে ৬০ বছর বসবাসের পরও ‘অবৈধ’ এক অভিবাসী




শাহ সুহেল আহমদ:

ফ্রান্সে ৬০ বছরেরও বেশি সময় বসবাসের পর একজন ৮০ বছর বয়সী নারী হঠাৎ করে হয়ে গেলেন “অবৈধ অভিবাসী”। টিউনিসীয় নাগরিক সাফিয়া ১৯৬৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ফ্রান্সে পা রাখেন। এত বছর ধরে নিয়মিতভাবে বসবাস করলেও আজ তিনি ফ্রান্সে কোনো বৈধ আবাসন অনুমতি ছাড়াই দিন কাটাচ্ছেন।

বিউমঁ-সুর-ওয়াজে (Beaumont-sur-Oise) শহরে বসবাসরত সাফিয়ার তিন সন্তান রয়েছে, যাদের সবাই ফরাসি নাগরিক। নিজের আবাস, পরিবার, সমাজ—সবকিছুই ফ্রান্সে গড়ে উঠলেও এখন তিনি নিজেকে অনিশ্চয়তার মাঝে খুঁজে পাচ্ছেন।

সমস্যার শুরু তিন বছর আগে, যখন সাফিয়ার স্বামী, যিনি আলঝেইমারে আক্রান্ত ছিলেন, হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে জানা যায়, তিনি টিউনিসিয়ায় অবস্থান করছেন। সাফিয়া তখন তাঁকে খুঁজতে স্বামীর পেছনে পাড়ি দেন টিউনিসিয়ায়। স্বামীর সেবায় এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, নিজের titre de séjour নবায়ন করতেই ভুলে যান। ২০২৪ সালের এপ্রিলে তাঁর স্বামী মৃত অবস্থায় উদ্ধার হন, পা বাঁধা অবস্থায়।

স্বামীর দাফন ও প্রশাসনিক কাজ সেরে তিনি যখন ফ্রান্সে ফেরত আসেন, তখন বিমানবন্দরে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর আবাসন অনুমতি ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ। তাঁকে বলা হয়, ফের ফ্রান্সে ঢুকতে হলে ভিসা লাগবে। পরবর্তীতে তিনি একবারের জন্য তিন মাসের একটি পর্যটন ভিসা নিয়ে দেশে ফিরতে সক্ষম হন।

ফ্রান্সে ফিরে এসে রেসিডেন্স পারমিট নবায়নের জন্য আবেদন করলে, ভাল-দ’ওয়াজ (Val-d’Oise) প্রেফেকচারের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। সাফিয়া বলেন, “আমি জানি না এখন কী করব। আমার জীবনের সবকিছু ফ্রান্সে—টিউনিসিয়ায় এখন আমার কেউ নেই।”

তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় মানুষ ও শহরের মেয়র। মেয়র নিজে উদ্যোগ নিয়ে প্রেফেকচারে যোগাযোগ করেন এবং সাফিয়ার জন্য “admission exceptionnelle au séjour” নামে একটি বিশেষ আবাসনের আবেদন পাঠিয়েছেন। এখন বিষয়টি প্রেফেকচারের হাতে।

স্থানীয় মানুষ সাফিয়ার পাশে আছেন। তিনি বলেন, “সবাই আমাকে সমর্থন করছেন, মিউনিসিপালিটি পাশে আছে। আমি একটি বিভীষিকাময় বছর পার করেছি, কিন্তু আমি হার মানব না।”

ভাল-দ’ওয়াজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাফিয়ার আবেদন তারা গ্রহণ করেছে এবং তা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর আইনি অবস্থান পুনর্বহাল হতে পারে।

সাফিয়ার কাহিনি শুধুই একজন নারী ও তাঁর পরিবারের গল্প নয়, এটি ফরাসি প্রশাসনের মানবিকতার পরীক্ষা। দীর্ঘদিন বসবাসকারী অভিবাসীরা কখনও কখনও সামান্য একটি কাগজ ভুলে গোটা জীবন ঝুঁকিতে ফেলে বসেন। এমন ঘটনা ফ্রান্সে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি অভিবাসীর কাছেও অজানা নয়।

এমন প্রশ্ন সামনে আসে: “কত বছর একটি দেশে থাকলে সেই দেশকে নিজের বলা যায়?”

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: