মিজান মোহাম্মদ :
নগরীর ওসমানী মেডিকেল কলেজ রোডের ফ্লেক্সিলোডের একটি দোকান সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত কখনো পুরো খোলা অবস্থায়, কখনো এক শাটারে, কখনো অর্ধেক শাটার নামিয়ে ব্যবসা করছে। যখনই প্রশাসন আসছে, বা আসার খবর পাচ্ছে তখনই ভিতর থেকে বন্ধ করে বসে থাকছে, কিছুক্ষণ পর আবার ব্যবসা শুরু। এভাবেই ৪/৫ টি ফ্লেক্সিলোডের দোকান, ১টি কাপড়ের দোকান, ২/৩ টি ফটোকপির দোকান এমন করেই সরকার ও প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন চিত্র পুরো নগর জুড়েই। জরিমানা করেও প্রশাসনের একার পক্ষে প্রায় লকডাউন পূর্নরূপে পালন করানো যাচ্ছে না।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ছাব্বিশ লাখ ও মৃত্যু ছাড়িয়ে এক লাখ বিরাশি হাজার। সংক্রমণ এড়াতে মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে এলাকাকে। প্রশাসনিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে প্রশাসনের লোকদের। কিন্তু এসব কাজে দেখা মিলছে না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। বাজারঘাটসহ বিভিন্নস্থানে সামাজিক দূরত্ব মানতেও বলছেন না তারা ভোট হারাবার ভয়ে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রয়েছে ২৭ ওয়ার্ড। এর পাশাপাশি রয়েছে সদর উপজেলা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা। শুধুমাত্র সিসিকের এরিয়াতেই ছোট বড় প্রায় অর্ধশতাধিক হাটবাজার রয়েছে। এসব বাজারগুলোতে মানা হচ্ছেনা সামাজিক দূরত্বসহ সতর্কতা। লকডাউন ঘোষিত এলাকায় আগের মতোই চায়ের দোকানে আড্ডা জমছে। চলছে অহেতুক ঘোরাঘুরি। পুলিশসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যেপথে যাচ্ছেন তখন সেদিকের লোকজন দৌঁড়ে পালাচ্ছেন জরিমানার ভয়ে। আবার তারা আড্ডা দিচ্ছেন। সন্ধ্যার পর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় বিরাজ করে যেন ঈদের আমেজ। এ ধরণের কর্মকান্ড থেকে জনগণকে বিরত রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তেমন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
নগরীর লালদীঘির পাড়, লালাবাজার, কাজীরবাজার, রিকাবিবাজার, শিবগঞ্জ, কাজীটুলা, আম্বরখানা, মজুমদারী ঘুরে দেখা গেছে জমজমাট পরিবেশ। আতঙ্ক উপেক্ষা করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নগরবাসী। বাজার করা, ওষুধ ক্রয়সহ বিভিন্ন অজুহাতে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ দোকানের শাটার অর্ধেক নামিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন আড্ডা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি দেখেই শাটার নামিয়ে বসে থাকেন কয়েক মিনিট ,পরেই আবার দোকান সাজিয়ে বসে যান। পুলিশ প্রশাসন কিভাবে কাজ করছে তা দেখতেও বাজারে ভিড় জমায় অনেক উৎসুক মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর এক কাউন্সিলর বলেন, ‘আমরা কথা বললে গ্রামের সব মানুষ তা মানেন না। যদি জবরদস্তি করি তাহলে পরে ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। প্রশাসনের লোকজনকে তারা ভয় পায়, তাই কথা মানে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুল শিক্ষক সুশান্ত দাস বলেন, ‘প্রশাসন সচেতন করা সত্তেও জনগন তা মানছে না। পুলিশ এলাকায় না আসলে কেউ কথা শুনে না। তাছাড়া সিটির কাউন্সিলর এলাকার ব্যবসায়ীদের কিছু বলছেন না, ফলে লকডাউন অমান্য করা ব্যবসায়ীদের সাহস দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
নগরের মত একই চিত্র শহরতলীতে। সদর উপজেলা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ঘুরে লকডাউন অমান্য করা ব্যবসায়ী ও জনগণের দেখা পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের সৈয়দ মুতাকাব্বির ফাহাদ বলেন, ‘নিয়মিত বাজার মনিটরিং, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। আমরা সতেচন এলাকাবাসীও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি জনগনকেও আরো সচেতন করতে। লকডাউন ঘোষনা করা হলেও বিচ্ছিন্নভাবে অনেকেই তা মানছেন না। প্রশাসনের পাশাপাশি যদি সকল জনপ্রতিনিধিগণ এগিয়ে আসতেন তবে চিত্রটাই পাল্টে যেত। ‘