রবিবার, ৪ জুন ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শ্রীলংকা থেকে বাংলাদেশকে ৩ শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ বিশ্বব্যাংকের




চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। যা আগামী অর্থবছর আরও কিছুটা বেড়ে গিয়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছাবে। কোভিড-১৯ মহামারি এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এই অর্জন অত্যন্ত শক্তিশালী বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকে সতর্ক হওয়াসহ শ্রীলংকার চলমান পরিস্থিতি থেকে ৩ বিষয়ে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোকাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

বুধবার ওয়েবিনারে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের চিফ ইকোনমিস্ট হ্যাস টিমার। তিনি এশীয় অঞ্চলের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছিল। চলতি অর্থবছর সেটি বাড়বে। আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধির এ হার আরও বাড়বে। করোনা মহামারি থেকে শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুটানের প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছর হয়েছিল মাইনাস ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছর সেটি বেড়ে দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে, যা আগামী অর্থবছর হতে পারে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া নেপালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছর হয়েছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ, চলতি অর্থবছর হতে পারে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছর সেটি আরও বেড়ে গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ১ শতাংশে। পাকিস্তানে গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছর সেটি কমে গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৩ শতাংশে এবং আগামী অর্থবছর আরও কমে ৪ শতাংশ হতে পারে।

এদিকে ভারতে গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছর বেড়ে হতে পারে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী অর্থবছর সেটি কমে হতে পারে ৮ শতাংশ (ভারতে অর্থবছর হিসাব করা হয় এপ্রিল-মার্চ)। এছাড়া শ্রীলংকার অর্থবছর হিসাব করা হয় জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ হিসাবে গত অর্থবছর শ্রীলংকার প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। যেটি চলতি অর্থবছর কমে গিয়ে হতে পারে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে আগামী অর্থবছর কোনো প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশ সম্পর্কে হ্যান্স টিমার বলেন, শ্রীলংকা থেকে তিন বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারে বাংলাদেশ। প্রথমত, দ্বিপাক্ষিক বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা করতে হবে। বিদেশি ঋণের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। উৎপাদনশীল খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এছাড়া অনুৎপাদনশীল বিনিয়োগ পরিহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, রিজার্ভ সংরক্ষণে মনোযোগী হতে হবে বাংলাদেশকে। কেননা এখন পর্যন্ত ৬ মাসের ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে। এটি খরচের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। তৃতীয়ত, রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় অনেক কম। যেহেতু সরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে সেহেতু রাজস্ব বাড়ানোর বিকল্প নেই। বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যেতে পারে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সেটি আরও বেড়ে যেতে পারে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ছে। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের সংকটও দেখা দিতে পারে। বহির্চাপের কারণে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এজন্য সঠিক নীতি গ্রহণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। করোনা মহামারি মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অন্যান্য দেশের চেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ খুব ভালো কাজে লেগেছে। যদিও এই প্যাকেজ সব খাতের উদ্যোক্তারা সমানভাবে সুবিধা নিতে পারেনি।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইকোনমিক আপডেটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে। তবে মূল্যস্ফীতি গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৬ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। সেটি আরও বেড়ে যেতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাসিং টেম্বন বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র ডেবিট সাসটেইনিবিলিট অ্যানালাইসিসে বাংলাদেশের নিম্ন ঋণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে যেভাবে দারিদ্র্য হার বেড়ে গিয়েছিল ২০২১ সালে এসে সেটি কমেছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের দিকে বাংলাদেশকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: