শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

অসহিষ্ণু আওয়ামী লীগের লেখক সাংবাদিক নিধন অভিযান




  • লোকমান আহম্মদ আপন

বিশ্বমহামারী করোনা মোকাবেলায় পুরো বাংলাদেশ যখন বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত আর চরম অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত তখন আওয়ামীলীগ সরকার সাংবাদিক, লেখক আরসোস্যালমিডিয়া এক্টিভিস্টনিধনে নেমেছে। সাংবাদিকরা সবসময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। করোনাকালীন এই মহাদুর্যোগেও ঘরে বসে নেই সাহসী গণমাধ্যমকর্মীরা। ইতিমধ্যে তিনজন সাংবাদিক কোভিড এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন বেশ কয়েক জন সাংবাদিক। কোভিড মাহামারীতেও থেমে নেই তাদের কলম। সাহসী এসব সংবাদকর্মীদের কারণে বিশ্ববাসী জানতে পারছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের অপশাসনজনিত অব্যস্থাপনার চিত্র। এজন্যেই গণমাধ্যমকর্মী এবং সোষ্যালমিডিয়া এক্টিভিস্টরা আওয়ামীলীগের প্রধানটার্গেট।

অবৈধভাবে ক্ষমতায় জেঁকে বসা আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমানে চরম অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। নিজেদের অপকর্মে নিজেরাই দিশেহারা হয়ে শেখ হাসিনা সরকার তাদের সমালোচনামূলক কোন কিছু মেনে নিতে পারছে না। সরকারের বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত বা অপকর্মের বিরুদ্ধে যখনই কেউ ভিন্নমত পোষণ করে কিছু লিখছে বা বলছে তখনই তাকে মামলা দেয়া হচ্ছে কিংবা তুলে নিয়ে গুম করে ফেলা হচ্ছে। সরকারি অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো মূলধারার গণমাধ্যমে সব সময় তেমন একটা উঠে না এলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঠিকই কোননা কোনভাবে চলে আসছে। এজন্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে সব সময়ই অস্বস্তির কারণ। এসব সমালোচনার জায়গা তারা বন্ধ করে দিতে চায় বলেই গণমাধ্যম কর্মী ও এক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে তাদের এই কঠোর অবস্থান। ক্ষমতায় আরোহনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ তাদের দমন পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগের অত্যাচারে মুক্তমনা অনেক লেখক সাংবাদিক জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রবাসে আশ্রয় নেয়া লেখক সাংবাদিকদের দেশে থাকা পরিবার পরিজনকে দেয়া হচ্ছে নানান রকম হুমকী।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলার ক্ষেত্রে সরকারের যে অব্যবস্থাপনা রয়েছে সেগুলো নিয়ে কেউ যাতে কথা বলতে না পারে সেজন্য সবার মনে ভয় ধরিয়ে দিতে চায় সরকার। এজন্যে তাদের প্রধান টার্গেট এখন গণমাধ্যমকর্মী, লেখক আর অনলাইন এক্টিভিষ্টরা। তারা একের পর এক মামলা হামলা দিয়ে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নানা অনিয়ম এবং বিভিন্ন জায়গায় শাসক দলের সাথে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরির অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে অনেকেই সোচ্চার হয়ে ওঠায় তাদেরকেও মামলা হামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানী ও অপদস্থ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে আটক করেছে র‌্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদ। তাদের সাথে একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-এর পরিচালক ও ব্যবসায়ী মিনহাজ মান্নান ও প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশী সাংবাদিক তাসনিম খলিল এবং সাহেদ আলমকে।

র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাবার দুইদিন পর লেখক দিদারুল ভূঁইয়াকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে এবং সরকারের বিরুদ্ধে ‘গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে এদের সবার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। চরম বিতর্কিত এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি তৈরী করা হয়েছে মুক্তমনা লেখক. সাংবাদিক আর অনলাইন এক্টিভিস্টদের কন্ঠরোধ করবার জন্যে। তার প্র্রমাণ আওয়ামী লীগ সরকার দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক। এই আইনটি করার শুরু থেকে গণমাধ্যমকর্মী, মানাবাধিকার কর্মী ও তাদের সংশ্লিষ্ট সংগঠন তীব্র নিন্দা জানিয়ে আইনটি বাতিলের দাবী করে আসছিলো। আওয়ামী লীগ সরকার এসব দাবী আমলেই নেয়নি।

গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যম কর্মীদের  বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর অবস্থানের নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে বার্তা পাঠাচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এগুলো আমলে না নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান আরো কঠোর করছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট  মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা সরকার সমালোচক লেখক সাংবাদিক আর অনলাইন এক্টিভিস্টদের  হুমকী দিয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রদান করছেন নিয়মিত। পাশাপাশি আওয়ামী প্রশাসন মামলা হামলা দিয়ে সেই সাবধানবাণীগুলোর বাস্তবায়ন করে দেখাচ্ছে। যা মুক্তমনা বিবেকবান মানুষের জন্যে বিরাট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্রের লেবাসে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ভয়ংকর স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থাকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ ভুলে যচ্ছে, জেল জুলম আর অত্যাচার করে  মত প্র্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ করা যায়না। তারা ভুলে যাচ্ছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারীর ভবিষ্যৎ নিকষ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়।

লোবমান আহম্মদ আপন  :  লেখক ও সাংবাদিক, প্যারিস, ফ্রান্স।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: